Bank CSP Opening: আপনি আপনার শহর বা গ্রামের কোন একটি ব্যাংকের অথোরাইজেশন নিয়ে CSP বা কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট খুলবেন কিভাবে এবং মিনি ব্যাংকের সমস্ত লেনদেন করবেন কিভাবে সেই সম্পর্কে সমস্ত ডিটেলস আজকের এই প্রতিবেদনে আলোচনা করব।
CSP কি?
CSP মানে Customer Service Point (গ্রাহক সেবা কেন্দ্র)। এটি হলো কোন একটি ব্যাংকের অথরাইজ মিনি কাউন্টার, যেখানে ব্যাংকের মতোই কাস্টমার সমস্ত কাজ করতে পারে একদম বিনামূল্যে। যেমন অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চেক, পাস বই আপডেট, টাকা তোলা, টাকা জমা রাখা, টাকা ট্রান্সফার করা, চেক ডিপোজিট, নতুন অ্যাকাউন্ট বানানো ইত্যাদি। এরকম সমস্ত ধরনের কাজ যা একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চে করা যায় সেই সমস্ত কিছু কাস্টমার CSP -তে করতে পারেন। এতে ব্যাংকের অনেক কাজের প্রেসার কমে যায়। তাই ব্যাংকও চাই CSP অথরাইজেশন দিয়ে নিজেদের প্রেসার কমাতে।
সিএসপিতে ইনকাম হবে কিভাবেঃ
ব্যাংকের কর্মচারীদের মতো এখানে মাসিক বেতন সিস্টেম নেই। আপনি যদি CSP শুরু করেন তাহলে আপনার ইনকাম শুরু হবে কমিশনের ভিত্তিতে। আপনি CSP -তে ওই ব্যাংকের জন্য যত কাজ করবেন তার প্রত্যেকটি ট্রানজেকশন এর জন্য আপনি নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজ কমিশন পাবেন। উদাহরণস্বরূপ টাকার লেনদেনের ক্ষেত্রে (টাকা তোলা, টাকা ডিপোজিট করা) 0.04%, 0.05%, 0.06% পার্সেন্টেজে আপনি কমিশন পাবেন। যদি আপনার CSP -তে সারাদিন ১ থেকে ২লক্ষ টাকা লেনদেন হয় তাহলে আপনার দিনে ৪০০/৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মতো ইনকাম হবে শুধুমাত্র টাকা লেনদেনের জন্য। এছাড়া অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চেক, পাস বই আপডেট, চেক ডিপোজিট, নতুন অ্যাকাউন্ট বানানো, ইন্সুরেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট করা ইত্যাদি কাজ করে আপনি আরও টাকা ইনকাম করতে পারবেন। এইভাবে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
কি কি যোগ্যতা লাগবেঃ
- আপনার বয়স মিনিমাম ২১ বছর হতে হবে।
- কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পাস হতে হবে এবং কম্পিউটার চালানো জানতেই হবে।
- স্থায়ী ঘর চাই ২০০ থেকে ২৫০ বর্গফুটের (নিজের ঘর বা ভাড়া ঘর হলেও চলবে)।
- ইন্টারনেট কানেকশনযুক্ত কম্পিউটার/ল্যাপটপ, সাথে প্রিন্টার, পাসবুক প্রিন্টার, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার থাকতে হবে।
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট।
- আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, ব্যাংক একাউন্ট, জায়গার দলিল বা ভাড়ার রশিদ।
- দায়িত্বশীল ও কর্মঠ হতে হবে।
কে CSP প্রদান করে?
CSP প্রদান করে ব্যাংক, কিন্তু থার্ড পার্টি কোন কোম্পানির মাধ্যমেম। মানে আপনি যদি চান লোন নেওয়ার মত ব্যাংকে গিয়ে CSP নেবার জন্য আবেদন করবেন, সেটি করতে পারবেন না। কারণ আমাদের দেশে এটাই নিয়ম। ব্যাংক আপনাকে CSP দেবে কিন্তু মাঝখানে কোন একটি কোম্পানি থাকবে। সারা দেশের প্রত্যেকটি ন্যাশনাল ব্যাংক এর CSP প্রোভাইড করার কোম্পানির রয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ অনেকেই জানিনা কোন কোম্পানির কাছে কোন ব্যাংকের CSP নেব। আর এখানে ঘটে যায় সব থেকে বড় ফ্রড। আমরা যখন নতুন CSP নিতে যাই তখন আমাদের এই অনভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক ফ্রড কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা CSP দেওয়ার নাম করে আমাদের কাছ থেকে টাকা লুটে নেয়। তাই এই সমস্ত ফ্রড থেকে সাবধান থাকতে হবে।
কিভাবে CSP পাওয়া যায়?
CSP নিতে চাইলে আপনি অনলাইন বা অফলাইন দুইভাবেই আবেদন করতে পারেন। তবে অনলাইনে আবেদন করলে ফ্রড হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই অফলাইনে আবেদন করাই ভালো। বেস্ট দুটি পদ্ধতি হলো-
- সর্বপ্রথম আপনি যে ব্যাংকের CSP নিতে চান সেই ব্যাংকের ব্রাঞ্চে যান। প্রয়োজনে হোম ব্রাঞ্চে যান এবং ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করুন। তাকে বোঝান যে আপনি CSP নিলে কিভাবে ব্রাঞ্চের কাজের প্রেসার কমাতে পারবেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করুন কোন কোম্পানি এই ব্যাংকের CSP প্রোভাইড করে। ম্যানেজারের কাছ থেকে তার যোগাযোগ নাম্বার নিয়ে আসুন এবং আবেদন করুন। এক্ষেত্রে ম্যানেজারের সাথে আপনার ভালো ইমপ্রেশন রাখা জরুরী কারণ আবেদন করার পর যখন আপনার CSP সেন্টার ভেরিফিকেশন করতে যাবে তখন সেখানে ম্যানেজারও থাকবে এবং তারও অ্যাপ্রভাল লাগবে।
- আপনার আশেপাশের এলাকায় যদি কারোর CSP সেন্টার থাকে তার সাথে যোগাযোগ করুন এবং তার কাছ থেকে ডিটেইল নিয়ে আবেদন করুন। এক্ষেত্রে ওই CSP সেন্টার Owner যদি ডিটেইল দিতে নাকচ করে তাহলে দেখবেন CSP সেন্টারে অনেকগুলি সার্টিফিকেট দেয়াল টাঙ্গানো থাক। তার মধ্যে একটি সার্টিফিকেট ওই কোম্পানির হবে। আপনাকে সেটা খুঁজে কোম্পানির নাম দেখে আসতে হবে এবং তারপর গুগল সার্চ করলে খুব সহজেই আপনি ডিটেইলস পেয়ে যাবেন।
CSP খুলতে কত টাকা লাগে?
CSP খুলতে গেলে যে সমস্ত বেসিক জিনিসপত্র প্রয়োজন যেমন- ইন্টারনেট কানেকশনযুক্ত কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, সাথে প্রিন্টার, পাসবুক প্রিন্টার, ফিংগারপ্রিন্ট স্ক্যানার। এগুলো আপনাকে নিজে কিনতে হবে। আপনার কাছে টাকা না থাকলে যে কোন সমিতি বা বন্ধন ব্যাংকের সমিতি থেকে লোন নিয়ে এগুলো কিনতে পারেন। আর CSP রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাগে। এই টাকার বিনিময়ে কোম্পানি আপনার নিজস্ব ডকুমেন্ট নিয়ে একটি রেজিস্ট্রেশন আইডি ও পাসওয়ার্ড বানিয়ে দেবে যেটি দিয়ে লগইন করে আপনি CSP -এর সমস্ত কাজ করতে পারবেন।
বিশেষ কিছু তথ্যঃ
- ম্যানেজারের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখবেন কারণ ভেরিফিকেশন এর পর তিনি অ্যাপ্রভাল দেবেন।
- CSP আইডি ও পাসওয়ার্ড পাওয়ার আগে কোন কোম্পানিকে টাকা দেবেন না।
- আপনার ইনকাম ভালো হলে আপনার CSP সেন্টারে CCTV ইন্সটল করে নেবেন।